পেঁয়াজ আবাদের ধুম, বীজের দামে হতাশ কৃষক
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। পদ্মার নদীবেষ্টিত অত্র উপজেলার পলল ভূমিতে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে। তাই প্রতি বছরের মতো এবারও রবি মৌসুমে মুড়ি কাঠা পেঁয়াজ আবাদের ধুম লেগে আছে প্রতিটি কৃষক পরিবারে।
তবে এ বছর গুটি পেঁয়াজ বীজের চড়ামূল্যে কৃষকরা হতাশা প্রকাশ করলেও থেমে নেই আবাদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার কৃষক পরিবার চলতি মৌসুমে গুটি পেঁয়াজ রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবাদি জমি সাজানো, বাজার থেকে গুটি পেঁয়াজ সংগ্রহ, সার ও মজুর কিনে এনে জমিতে গুটি পেঁয়াজ রোপণসহ আবাদি জমিতে সেচকার্যে দিনরাত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার কৃষাণ-কৃষাণীরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৫শ একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে প্রায় ৪২০ একর, গাজীরটেক ইউনিয়নে প্রায় ৪১০ একর, চরহরিরাপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪০০ একর ও চরঝাউকান্দা ইউনিয়নে প্রায় ২৭০ একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। তবে এ বছর বাজারে গুটি পেঁয়াজের উচ্চমূল্য হওয়ায় অনেকে পেঁয়াজ আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
মঙ্গলবার উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের চরশালেপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সালাম ফকির (৫৮) জানান, বাজারে এক মণ গুটি পেঁয়াজ প্রায় ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে মুড়ি কাঠা পেঁয়াজের আবাদ করতে প্রায় ১০ মণ গুটি পেঁয়াজ লাগে। সেই সঙ্গে জমি সাজানো, সার, সেচ ও মজুর মিলে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, এ বছর পেঁয়াজ চাষিরা ডিএপি সার সংকটে ভুগছে। সরকারি বরাদ্দ কম হওয়ায় ডিলারদের কাছে ডিএপি সার পাওয়া যায় না। তাই কৃষকরা বাধ্য হয়ে ১ হাজার ৫০ টাকা দরে প্রতি বস্তা সার বাইরে থেকে ১ হাজার ৮শ টাকা দরে কিনে এনে পেঁয়াজ আবাদ করে চলেছে।
উপজেলা সদর বাজার ঘুরে জানা যায়, প্রতি মণ মোটা গুটি পেঁয়াজ বীজ ৩ হাজার ৮শ টাকা দরে এবং চিকন গুটি পেঁয়াজ প্রায় ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে কৃষক ও পাইকাররা এসে অত্র বাজার থেকে গুটি পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের এক কৃষক আবজাল বিশ্বাস (৪২) বলেন, মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদ করতে খরচ যাই হোক না কেন, বাপ-দাদার পেশা তাই জমিতো আর অনাবাদী রাখা যাবে না।
তিনি আরও জানান, পদ্মার চরের এক বিঘা (৩৩) শতাংশর জমিতে কম হলেও ১২০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। তাই উৎপাদন মৌসুমে বাজার মূল্য ঠিক থাকলে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত থাকলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
একই দিন আরেক কৃষক আলম মিয়া (৫০) বলেন, যেসব কৃষকদের ঘরে গুটি পেঁয়াজ মজুত আছে এবং মাঠে নিজেরা কাজ করতে পারে। কেবলমাত্র তারাই পেঁয়াজ আবাদ করে প্রচুর লাভবান হতে পারবেন।
তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও এ বছর উপজেলার কৃষকরা পেঁয়াজ আবাদে থেমে নেই। তারা নিজেদের সর্ব পুঁজি বিনিয়োগ করে জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করে চলেছেন।
উপজেলার বেশিরভাগ আবাদি জমি পদ্মা নদীর আশপাশ এলাকায় হওয়ায় পললবাহিত মাটিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য খুব উপযোগী বলে জানা যায়।












































