জলবায়ু উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন শক্তিশালীকরণে সেমিনার অনুষ্ঠিত।
- আপডেট সময় ০৫:৪৩:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
- / ১ বার পড়া হয়েছে
সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) উপজেলায় জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে দ্রুত বাড়তে থাকা বাস্তুচ্যুতি মোকাবিলা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২৪ নভেম্বর ২০২৫ উপজেলা কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হলো “জলবায়ু উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক সেমিনার। সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা এসডিআই ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স (CCR) প্রজেক্ট এ আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মারুফ হাসান (ইউএনওর প্রতিনিধি)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসডিআই চট্টগ্রাম জোনের জোনাল ম্যানেজার মোঃ মিলন মিয়া। সভা সঞ্চালন করেন কমিউনিটি মোবিলাইজার বাদল রায় স্বাধীন ও সিএসও গ্রুপের সহ-সভাপতি সাংবাদিক ইলিয়াস কামাল বাবর।বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সন্দ্বীপ শাখার ব্যবস্হাপক মোঃ আক্তারুজ্জামান সুজন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, পিআইও প্রতিনিধি তপন মাহমুদ, সন্দ্বীপ শিল্প কলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম শিল্পী, সন্দ্বীপ প্রেস ক্লাব সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা সন্দ্বীপ শাখার সভাপতি ইলিয়াছ সুমন, প্রবন্ধিক মাস্টার নীলাঞ্জন বিদুৎ, ইসমাইল ফরিদ, এসডিআই-এর আরএম মোঃ ফসিউল আলম
আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা কাজল বেগম, মোঃ ফরিদ, জেসমিন, জয়দেব জলদাস সহ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এনজিও প্রতিনিধিরা।
বক্তারা বলেন, উপকূলীয় উপজেলা হিসেবে সন্দ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের একটি। সমুদ্রভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে প্রতিবছর বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আশ্রয়ন প্রকল্পে পুনর্বাসিত পরিবারগুলো ঘর পেলেও মৌলিক সেবা, নিরাপত্তা, জীবিকা ও অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে টিকে থাকার লড়াইয়ে দিন কাটাচ্ছে।
তারা উল্লেখ করেন—
“ঘর আছে, কিন্তু জীবনযাপন অনিশ্চিত”—এটাই সন্দ্বীপের বহু আশ্রয়ন প্রকল্পের বাস্তবতা।
সেমিনারে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়—স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থায় সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় বৃদ্ধি,জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর তালিকাভুক্তকরণ ও ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি,ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলোর আগাম সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত,নারী, শিশু, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের আলাদা সহায়তা কাঠামো,জীবিকাভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বিকল্প কর্মসংস্থান,পরিবেশবান্ধব আবাসন এবং গ্রাম রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার,স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নীতিগত সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
সেমিনারে উপস্থিত ভুমিহীন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা ১৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল—সন্দ্বীপের জন্য পৃথক জলবায়ু উদ্বাস্তু নীতিমালা প্রণয়ন।আশ্রয়ন প্রকল্পে স্থায়ী বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসেবা, কবরস্থান নিশ্চিতকরন। নদীভাঙন ও সমুদ্রক্ষয় রোধে দীর্ঘমেয়াদি বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার।বাস্তুচ্যুত পরিবারের সরকারি তালিকা হালনাগাদ ও ডিজিটাল ডেটাবেজ। পুনর্বাসিত পরিবারের কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ।পরিবেশবান্ধব টেকসই ঘর নির্মাণ। ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলোকে অগ্রাধিকারভিত্তিক পুনর্বাসন।স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি।
আশ্রয়ন এলাকার রাস্তা, সেতু, স্যানিটেশন ও ড্রেনেজের উন্নয়ন।শিশুদের নিরাপদ স্কুল যাতায়াত ব্যবস্থা।নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সহায়তা কর্মসূচি। জলবায়ু বিপর্যয়ের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার।উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিতে জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ সেল গঠন। পুনর্বাসন প্রকল্পের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন এনজিও–সরকার–স্থানীয় সরকারের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা।. জলবায়ু উদ্বাস্তু উন্নয়ন প্রকল্পে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন—এই ১৬ দফা বাস্তবায়ন হলে সন্দ্বীপের হাজারো জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার মানবিক জীবন ফিরে পাবে এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম হবে আরও টেকসই, নিরাপদ ও কার্যকর।




















