০২:২৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫

লি‌বিয়ায় হত‌্যা ও মানবপাচার মামলার আসামী গ্রেফতার

কালেরধারা
  • আপডেট সময় ১১:৫৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের অন্যতম হোতা মাদারীপুরের বাদল লস্কর গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার লক্ষীগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল খালেক লস্করের ছেলে ও কুখ্যাত মানবপাচারকারী বাদল লস্কর (৪৫) দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর অবশেষে পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার মাদারীপুর সদর মডেল থানার এসআই মুন্সী মাহফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, লিবিয়ায় মাফিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করে বাংলাদেশি তরুণদের জিম্মি করে নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে বাদল লস্করের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মাদারীপুর সদরের ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারী শামিম মিয়ার ছেলে আব্দুল খালেক (বিল্টন)–কে লিবিয়ায় হত্যার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

উল্লেখ্য, দুবাই ও লিবিয়া প্রবাসী মানবপাচারকারী মাফিয়া জামাল খলিফা (৩৫), বাদল লস্কর এবং তার বোন–জামাই মাদারীপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার দালাল এমদাদ হাওলাদার (৫৫) মিলে ভয়ংকর একটি মানবপাচার চক্র পরিচালনা করত। ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তারা জেলার বিভিন্ন এলাকার তরুণ–যুবক ও তাদের পরিবারকে প্রলুব্ধ করত।

প্রতি জনের কাছ থেকে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রথমে দুবাই, তারপর শ্রীলঙ্কা ঘুরিয়ে লিবিয়ায় পৌঁছে দেওয়া হতো। সেখানে গিয়ে বেশিরভাগ তরুণকে লিবিয়ার মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হত। এতে মাদারীপুরের প্রায় ২০–২৫টি পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

এরপর লিবিয়ার মাফিয়া, জামাল খলিফা ও এই চক্র একযোগে নিখোঁজ তরুণদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে সেই ভিডিও তাদের পরিবারে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আরও ১০–১৫ লাখ টাকা আদায় করত। তথাকথিত “গেম হাউস” নামের স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন করে পুনরায় অর্থ আদায় করা হতো।

নির্যাতনের একপর্যায়ে মাদারীপুরের ঘটমাঝির তরুণ আব্দুল খালেক (বিল্টন) মৃত্যু বরণ করলে তার লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে লাশ ভেসে ওঠলে মরুভূমিতে মাটিচাপা দেওয়া হয়। বিল্টনের সঙ্গে থাকা অন্য তরুণরা কৌশলে মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর তার পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলার পর বাদল লস্কর ও তার স্বজনেরা আপোষের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় এবং তিনি পলাতক ছিলেন। অবশেষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে যান।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেন জানান, বাদল লস্করের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠিয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

লি‌বিয়ায় হত‌্যা ও মানবপাচার মামলার আসামী গ্রেফতার

আপডেট সময় ১১:৫৫:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

লিবিয়ায় মানবপাচার চক্রের অন্যতম হোতা মাদারীপুরের বাদল লস্কর গ্রেপ্তার হয়েছেন।
মাদারীপুর সদর উপজেলার লক্ষীগঞ্জের বাসিন্দা আব্দুল খালেক লস্করের ছেলে ও কুখ্যাত মানবপাচারকারী বাদল লস্কর (৪৫) দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর অবশেষে পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার মাদারীপুর সদর মডেল থানার এসআই মুন্সী মাহফিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, লিবিয়ায় মাফিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করে বাংলাদেশি তরুণদের জিম্মি করে নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগে বাদল লস্করের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মাদারীপুর সদরের ঘটমাঝি ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারী শামিম মিয়ার ছেলে আব্দুল খালেক (বিল্টন)–কে লিবিয়ায় হত্যার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

উল্লেখ্য, দুবাই ও লিবিয়া প্রবাসী মানবপাচারকারী মাফিয়া জামাল খলিফা (৩৫), বাদল লস্কর এবং তার বোন–জামাই মাদারীপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার দালাল এমদাদ হাওলাদার (৫৫) মিলে ভয়ংকর একটি মানবপাচার চক্র পরিচালনা করত। ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তারা জেলার বিভিন্ন এলাকার তরুণ–যুবক ও তাদের পরিবারকে প্রলুব্ধ করত।

প্রতি জনের কাছ থেকে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রথমে দুবাই, তারপর শ্রীলঙ্কা ঘুরিয়ে লিবিয়ায় পৌঁছে দেওয়া হতো। সেখানে গিয়ে বেশিরভাগ তরুণকে লিবিয়ার মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হত। এতে মাদারীপুরের প্রায় ২০–২৫টি পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে।

এরপর লিবিয়ার মাফিয়া, জামাল খলিফা ও এই চক্র একযোগে নিখোঁজ তরুণদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে সেই ভিডিও তাদের পরিবারে পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আরও ১০–১৫ লাখ টাকা আদায় করত। তথাকথিত “গেম হাউস” নামের স্থানে আটকে রেখে নির্যাতন করে পুনরায় অর্থ আদায় করা হতো।

নির্যাতনের একপর্যায়ে মাদারীপুরের ঘটমাঝির তরুণ আব্দুল খালেক (বিল্টন) মৃত্যু বরণ করলে তার লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে লাশ ভেসে ওঠলে মরুভূমিতে মাটিচাপা দেওয়া হয়। বিল্টনের সঙ্গে থাকা অন্য তরুণরা কৌশলে মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। এরপর তার পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলার পর বাদল লস্কর ও তার স্বজনেরা আপোষের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় এবং তিনি পলাতক ছিলেন। অবশেষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে যান।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেন জানান, বাদল লস্করের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতে পাঠিয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।