প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা
- আপডেট সময় ১২:০৪:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত “বাবুগঞ্জ দুই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত, গেজেট বাতিলে নির্দেশ” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের রহমতপুর ইউনিয়নের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক খান এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের বকশির চর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা। প্রতিবাদলিপিতে তারা উক্ত সংবাদকে বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও যড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে সামাজিক মান-মর্যাদা হেয় করার একটি অপচেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রতিবাদ বিবৃতিতে রহমতপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মালেক খান জানান, তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি গ্রামের বাড়ি বাবুগঞ্জ চলে আসেন এবং যুদ্ধকালীন বেইজ কমান্ডার আবদুল মজিদ খানের অধীনে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন। বাবুগঞ্জের বেইজ কমান্ডার মজিদ খানের কাছে তিনি অস্ত্র সমর্পণ করে সনদপত্র গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে ২০০০ সালে সরকার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তির কার্যক্রম শুরু করলে আবেদন করেন তিনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই শেষে ২০০৫ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাকে বেসামরিক গেজেটভুক্ত করে, যার নম্বর-১৯৪৬। এই বেসামরিক ১৯৪৬ নং গেজেটের মাধ্যমেই তিনি প্রথমে ৩০০ টাকা মাসিক ভাতা থেকে শুরু করে বর্তমানে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা গ্রহণ করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করার কারণে ২০১৩ সালে পাস হওয়া সেনাবাহিনীর গেজেটও তার নাম তালিকাভুক্ত হয় যার সেনা গেজেট নম্বর-২৩৭৯। তার নামে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় গেজেট থাকলেও তিনি শুধুমাত্র বেসামরিক গেজেটের অধীনেই ভাতা গ্রহণ করেছেন। অতিসম্প্রতি উভয় গেজেটে নাম থাকা বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে গত ১৩ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ১০০তম সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেনাবাহিনী গেজেট (গেটেজ নং-২৩৭৯) বাতিল করা হয়। বর্তমানে তার বেসামরিক গেজেট নম্বর-১৯৪৬ চালু আছে এবং এখনো তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত রয়েছেন। তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সকল প্রমাণপত্র এবং সনদপত্র রয়েছে।
একইভাবে চাঁদপাশা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা জানান, তার নামেও দুইটি গেজেট রয়েছে। সম্প্রতি তার নামে মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি বসতঘর বীর নিবাস বরাদ্দ হয়। এই বীর নিবাস নির্মাণ কাজের শেষ পর্যায়ে টয়লেট নির্মাণের সময় জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে স্থানীয় মিরাজুল হাসান নামে জনৈক এক ব্যক্তি একটি মিথ্যা অভিযোগ করেন। মন্ত্রণালয়ে ওই অভিযোগের পরে গত ১৩ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ১০০তম সভায় তার বেসামরিক ১৮৫৪ নম্বর গেজেট বাতিল করা হয়। তার দুটি গেজেটের একটি বাতিল করা হলেও লাল মুক্তিবার্তা গেজেট নম্বর-৬০১০৪০৩২৯ এখনো বহাল আছে এবং তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত আছেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার স্বপক্ষে তার সকল প্রমাণ ও সনদপত্র রয়েছে।
অথচ তাদের উভয়কে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মানহানিকর বলে মন্তব্য করেছেন তারা। আসল ঘটনা না জেনে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের সামাজিক মান-মর্যাদা নষ্ট করার জন্য এমন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। তাই বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মালেক খান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লা উভয়ে উক্ত বানোয়াট, মানহানিকর ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল করিম হাওলাদার জানান, রহমতপুর ইউনিয়ন কমান্ডার আবদুল মালেক খান এবং চাঁদপাশা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিজ উদ্দিন মোল্লার নামে একাধিক গেটেজ রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে একের অধিক গেজেট থাকার বিষয়টি সম্প্রতি জামুকার সভায় আলোচনা হলে যাদের একের বেশি গেজেট রয়েছে সেগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এই গেজেট বাতিল মানে এটা নয় যে তারা মুক্তিযোদ্ধা নন অথবা তারা সবাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তারা অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সর্বত্র স্বীকৃত আছেন এবং থাকবেন। #




















