কালকিনিতে দখল–দূষণে মৃতপ্রায় ঐতিহ্যবাহী ‘কুমার ডুবি’ খাল থমকে গেছে জনজীবন ও কৃষিকাজ
- আপডেট সময় ০৮:৩১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
- / ২ বার পড়া হয়েছে
আবির হাসান পারভেজঃ মাদারীপুরের কালকিনির অন্যতম প্রাচীন ও খরস্রোতা খাল ‘কুমার ডুবি’ আজ দখল, দূষণ ও অব্যবস্থাপনার চাপে প্রায় মৃতপ্রায়। একসময় নৌকা চলাচল, কৃষি সেচ এবং জল নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিত এই খালটি এখন পরিণত হয়েছে দুর্গন্ধময় বর্জ্যের স্তূপে। বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা এবং শুকনা মৌসুমে পরিবেশ দূষণ—এ দুই সংকটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় জনজীবন।দখল–দূষণের দৌরাত্ম্যে খাল হারাচ্ছে অস্তিত্বসরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পৌর এলাকার চর-ঝাউতলা গ্রামের পালপাড়া অংশজুড়ে খালের দু’পাশে চলছে অবৈধ দখলের মহোৎসব। কোথাও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা-আধা পাকা স্থাপনা, আবার কোথাও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে খাল ভরাট করে। একইসঙ্গে খালে নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে বাজার, গৃহস্থালি ও প্লাস্টিক বর্জ্য। এতে খালের তলদেশ পলিথিন, কাঁচ ও অন্যান্য অপচনশীল আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহাআলম ও সালাম বেপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“একসময় এই খালে নৌকা চলত। আর এখন শুধু আবর্জনার স্তূপ। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।”
দূষণে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে
দূষিত কালো পানির তীব্র দুর্গন্ধে খালের আশপাশে বসবাস করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আ. কাদের জানান,
“এলাকার অনেক শিশু চর্মরোগ, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।”
কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
‘কুমার ডুবি’ খালের ওপর আশপাশের চর-ঝাউতলা, উত্তর রাজদী, জোনারদ্বন্দ্বীসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্ভরশীল। কিন্তু খাল ভরাট হয়ে প্রাকৃতিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই এসব এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
ফলে বোরো, আমন ও রবি মৌসুমের ফসল আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহল খালের মুখে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে নিজেদের স্বার্থে পানি বিক্রি করছে। সময়মতো পানি বের হতে না পারায় বছরে কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে।
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক বেপারী জানান,
“কুমার ডুবি খাল পুনঃখনন ও দখলমুক্ত করার দাবি বহুবার জানালেও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ অভিযান চলছে ঢিমেতালে।”
উন্নয়ন প্রকল্পের আশ্বাস
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ-উল আরেফীন বলেন,
“খালের দু’পাশে শিগগিরই সংস্কারকাজ শুরু হবে। বৃহত্তর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল খনন, দখলমুক্তকরণ এবং সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এতে খালটির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
সমাধানে দৃষ্টি জনগণের
অবৈধ দখল, বর্জ্য ফেলা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে ঐতিহ্যবাহী ‘কুমার ডুবি’ আজ অস্তিত্ব সংকটে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা—দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে খালটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে, যাতে স্বাভাবিক জনজীবন, কৃষিকাজ ও পরিবেশ ফিরে পায় স্বস্তি।
এখন পুরো অঞ্চল তাকিয়ে আছে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দিকে—কবে শুরু হবে বাস্তবসম্মত উদ্ধার অভিযান।




















