ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন – প্রার্থী পুনর্মূল্যায়নের চিন্তা
- আপডেট সময় ০৩:৩৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৪ বার পড়া হয়েছে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৬ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করলেও জামায়াতে ইসলামী মনোনয়নের সবুজ সংকেত দিয়ে প্রার্থীদের মাঠে নামিয়েছে প্রায় এক বছর আগে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এলাকায় জনপ্রিয়তা, স্থানীয় বিরোধ, প্রার্থীর ভাবমূর্তিসহ বিভিন্ন কারণে ঘোষিত তালিকার কিছু আসনে প্রার্থিতা পুনর্মূল্যায়নের চিন্তা করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে দুদলের প্রার্থী তালিকায় যোগ হতে পারে কিছু নতুন মুখ। জানা গেছে, বিরোধপূর্ণ আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের ডেকে ইতোমধ্যেই দফায় দফায় কথা বলে বিরোধ নিরসনের চেষ্টা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত দুদিনে অন্তত এক ডজনের বেশি নির্বাচনি এলাকার মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন। মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। পাশাপাশি হাইকমান্ড থেকে ঘোষিত প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই করে দেখা হচ্ছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানিয়েছেন, বিরোধপূর্ণ আসনগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় আনা হচ্ছে বড় ধরনের পরিবর্তন। তালিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের তিনজন ভিপি, দুজন জিএসসহ বেশ কয়েকজন জুলাই যোদ্ধার নাম আলোচনায় আছে। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় আরও বড় চমক থাকবে। এছাড়া শরিক সাত দলের প্রার্থীদের কিছু আসনে ছাড় দেওয়ার চিন্তা করছে জামায়াত।
কোথাও বিরোধ রাখতে চায় না বিএনপি
বিরোধপূর্ণ আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের ঢাকায় তলব, সমাধানের চেষ্টা * কয়েকটি আসনে বয়স্ক প্রার্থী নিয়ে জটিলতা, পরিবর্তনের আবেদন
বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের মধ্যে বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে বিরোধপূর্ণ আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের ঢাকায় ডেকে এনে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। মঙ্গলবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেশ কয়েকটি আসনের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কথাও বলেছেন। কারও কারও সঙ্গে ফোনেও কথা বলছেন বিএনপি হাইকমান্ড। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়-এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ধানের শীষের পক্ষে মাঠে থাকাসহ তাদের নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মনোনয়নবঞ্চিতরাও তাদের আসনে নিরপেক্ষভাবে জনপ্রিয়তা যাচাই করে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে দলের প্রতি আনুগত্য থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে কয়েকটি আসনে বয়স্ক প্রার্থী নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে তুমুল সমালোচনা চলছে। একদিকে এসব প্রার্থী বয়সের ভারে ঠিকমতো প্রচারণা চালাতে পারছেন না। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছেও তারা অপরিচিত। আবার বিগত আন্দোলন-সংগ্রামেও তাদের কোনো ধরনের ভূমিকা ছিল না। প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণার পর এসব আসনে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হওয়ায় সেখানে বিশেষ নজর রাখছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। পরে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে বেশকিছু আসনে বিক্ষোভ করে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা। এর মধ্যে বেশি বিক্ষোভ হয় ২৩টি আসনে। এসব আসনের স্থানীয় নেতারা প্রার্থী ‘পুনর্বিবেচনার’ জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছেও আবেদন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিরোধপূর্ণ আসন নিয়ে গত সোমবার দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। সেখানেই বিরোধ নিরসনের সিদ্ধান্ত হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘কয়েকটি আসনে ক্ষোভ হতেই পারে। এসব আমরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সমাধানের চেষ্টা করছি।’
বিরোধ সমাধানের উদ্যোগ : কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) সংসদীয় আসনের মো. আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়ার পর ওই আসনে অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সামিরা আজিম দোলার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। গণসংযোগে গেলে দোলার গাড়িবহরে হামলাও করা হয়। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ১৪ নভেম্বর রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উভয়কে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে দলের নির্দেশনা প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে। এ সময় কালামকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন দোলা। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম বলেন, ‘দলের সুসংগঠিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় ধানের শীষকে বিজয়ী করার জন্য একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে আমরা ঐক্য অটুট রেখে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ-আশাশুনি) আসনে ডা. শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দিয়ে সাবেক সংসদ-সদস্য কাজী আলাউদ্দীনকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে কালীগঞ্জে বিএনপির একাংশ বিক্ষোভ মিছিল করে। এ আসনেও ডা. শহিদুলের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি হাইকমান্ড। ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে আখতারুল আলমের মনোনয়ন বাতিল করে সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল করীম সরকারকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে গণমিছিল ও বিক্ষোভ করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ। এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত আব্দুল করীম সরকারকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে ফোন করে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জানা গেছে, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে প্রার্থী করা হয়েছে প্রয়াত বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুলকে। এ আসনে আরও দুজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু এবং পুতুলের ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিপি ইয়াছির আরশাদ রাজন। পুতুলের প্রার্থিতা ঘোষণার পর থেকে টিপু ও রাজন সমর্থকরা পৃথকভাবে বিক্ষোভ করছে। বিএনপি মহাসচিব মনোনয়নবঞ্চিত টিপু ও রাজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সূত্রমতে, এই দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এলাকায় তার কোনো জনপ্রিয়তা নেই। সেখানে প্রার্থিতা পুনর্বিবেচনা করা না হলে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হতে পারবে না বলে তারা জানান। প্রয়োজনে নিরপেক্ষ কাউকে দিয়ে জরিপ করারও অনুরোধ জানান তারা। তবে ওই নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়-এমন কোনো কর্মকাণ্ড তারা করবেন না। ধানের শীষই তাদের ঠিকানা। এছাড়া এদিন জয়পুরহাট-১ ও জয়পুরহাট-২, রাজশাহী-৪ ও রাজশাহী-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনসহ আরও কয়েকটি আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব। যেসব আসনে প্রার্থী নিয়ে বিরোধ চলছে, পর্যায়ক্রমে সেসব আসনের মনোনয়নবঞ্চিতদের নিয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এছাড়া বিরোধপূর্ণ আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে যার শক্ত অবস্থান ও জনপ্রিয়তা আছে, তার সঙ্গেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা কথা বলছেন। কোনো কোনো আসনে প্রার্থীদের সঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও কথা বলছেন।
বয়স্ক প্রার্থী নিয়ে বেশি জটিলতা : অন্যদিকে কয়েকটি আসনে বয়স্ক প্রার্থী নিয়ে জটিলতায় পড়েছে বিএনপি। এসব আসনের প্রার্থী নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে সমালোচনা চলছে। ওইসব আসনের নেতারা জানান, এলাকার সাধারণ মানুষ প্রধানত বয়স ও শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, বয়োবৃদ্ধ নেতাদের নেতৃত্বদানের সক্ষমতা কমে গেছে। বিশেষ করে অভ্যুত্থান-পরবর্তী দেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্ম জেন-জি একটি ফ্যাক্টর। তাদের ভোটও নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এই প্রজন্ম এবারের ভোটে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। যেখানে শুধু তাদের ভোটই নয়; তারা পরিবারের সদস্যদেরও ভোটদানে প্রভাবিত করতে পারবেন। এমন বাস্তবতায় তরুণ এই প্রজন্মের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই এমন ব্যক্তিদের ভোটদানে তাদের আগ্রহ কম থাকবে বলে তারা যুক্তি দিচ্ছেন। তাই বাস্তবতা অনুধাবন করে অপেক্ষাকৃত তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত করার দাবি তুলছে ওইসব আসনের মনোনয়নবঞ্চিতরা।
কয়েকটি আসনে বয়স্ক প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য স্থানীয় নেতারা দলীয় হাইকমান্ডের কাছে আবেদনও করেছেন। সূত্রমতে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন ৮৮ বছর বয়সি মুশফিকুর রহমান। স্থানীয় নেতারা আবেদনে বলেন, এই আসনে দলের পরীক্ষিত নেতৃত্বকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিগত দিনে দলের কঠিন সময়ে, আন্দোলন-সংগ্রামে কসবা-আখাউড়ার রাজপথে যিনি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন-সেই কবীর আহমেদ ভূঁইয়াকে বিবেচনায় না রেখে দীর্ঘদিন এলাকাবিচ্ছিন্ন একজন প্রবীণ প্রবাসীকে মনোনয়ন দেওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।’
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে ঘোষিত বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মেহেদী আহমেদ রুমীকে পরিবর্তন করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শেখ সাদীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ১৬ জন শীর্ষ নেতা। আবেদনে বলা হয়, মেহেদী আহমেদ রুমীর মতো একজন বয়োবৃদ্ধ প্রার্থীর পক্ষে দলের একাংশকে নিয়ে প্রতিপক্ষকে ভোটের মাঠে মোকাবিলা করা কঠিন। এছাড়া রুমীর অসুস্থতা, কিছুটা ইমেজ সংকট, নেতৃত্বের এবং তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা এবং এক-এগারো তার পরিবারের বিতর্কিত ভূমিকাসহ নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়েছে। পক্ষান্তরে ওই আসনের বঞ্চিত প্রার্থী শেখ সাদীর সম্পর্কে আবেদনে বলা হয়েছে, তিনি অপেক্ষাকৃত তরুণ, ক্লিন ইমেজ এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে।
খোকসা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আবু হেনা মোস্তাফা সালাম লুলু বলেন, বর্তমান ভোটার তালিকার প্রায় ৪০ শতাংশ তরুণ এবং নতুন ভোটার। শেখ সাদীর জনপ্রিয়তা এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ সবচেয়ে বেশি। এছাড়া নানা সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড করেছেন। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে তিনি অনেক জনপ্রিয়। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। ১৭ বছর ধরে অনেকে হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এ আসনে সাদিকেই মনোনয়ন দেওয়া হলে ধানের শীষের বিজয় সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সরওয়ার জামাল নিজাম প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন। তার বয়স ৮০ বছরেরও বেশি। তার অতীত কর্মকাণ্ডসহ নানা বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে লিখিত জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি শীর্ষ তিন নেতা স্বাক্ষরিত এক আবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে নির্যাতিত-নিপীড়িত কর্মী হিসাবে বিএনপি ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় বিগত সময়ে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় সাবেক সংসদ-সদস্য সরওয়ার জামাল নিজামের নাম দেখে অনেকেই হতবাক ও ব্যথিত হয়েছেন। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে যারা দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে ছিল এ রকম কাউকে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার জন্য আবেদন জানান তারা।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মিজানুর রহমান সিনহা। তার বয়সও ৮০ বছরের বেশি। আবেদনে স্থানীয় নেতারা জানান, প্রার্থী করা হলেও তিনি ঠিকমতো গণসংযোগ করতে পারছেন না। যে কারণে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে দীর্ঘ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিপদ-আপদে তারা পাশে পেয়েছেন। স্থানীয়ভাবে সালামের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তাই মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য তারা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
জামায়াতের তালিকায় আসছে বড় পরিবর্তন
৩ ভিপি ২ জিএস, জুলাই যোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি রয়েছেন * ৫ জন সাবেক ভিসি, আজহারিসহ জনপ্রিয় কয়েকজন ইসলামিক বক্তা হবেন দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী
সবার আগে প্রার্থী তালিকা দিয়ে ভোটের ময়দানে অবস্থান নিলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে জামায়াতের প্রার্থী তালিকায় আনা হচ্ছে বড় ধরনের পরিবর্তন। চলমান আন্দোলনের শরিক দল, মহিলা, অমুসলিম, জুলাই যোদ্ধা, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত করতেই জামায়াত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। জামায়াতের নির্বাচনি টিম বর্তমানে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ করছে যাতে থাকছে বড় চমক।
চলতি বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে নির্বাচনি মাঠে চমক দেখাতে সক্ষম হয়েছে। প্রার্থীরা মাঠে রাত-দিন কাজ করছেন। সব আসনেই তাদের একক প্রার্থী। এমন কোনো আসনের কথা শোনা যায়নি যেখানে জামায়াতের একাধিক প্রার্থী বা বিদ্রোহী প্রার্থী আছে। অধিক সময় ময়দানে থাকার কারণে প্রার্থীরা ইতোমধ্যে প্রতিটি ভোটারের কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে জুলাই সনদের ওপর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান করাসহ ৫ দফা দাবিতে সমমনা আরও ৭টি দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে জামায়াত।
৮ দলের শরিক অপর ৭টি দলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন ছাড়বে জামায়াত। এই জোটের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করে বলেছে, গত এক সপ্তাহ ধরেই তারা আসন ভাগাভাগি নিয়ে কাজ করছেন। জামায়াত শরিকদের জন্য কতটি আসন ছাড়বে এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কারও কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা বলছেন, ৮ দলের শীর্ষ নেতাকে তারা সংসদে দেখতে চান। ইতঃপূর্বে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনায় দলীয় একটি সমাবেশে বলেছিলেন, সব ইসলামপন্থিদের এক ছাতার নিচে আনতে জামায়াত প্রয়োজনে ১০০ আসন ছাড় দেবে। তবে ৮ দল এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তারা এখন একমত যে, যাকে যে আসনে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবে তাকে সেখান থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি শরিকদের মধ্যে যে দলেরই হন। সবাই তার জন্য কাজ করবেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের বলেন, ৮ দলের শরিকরা কেউই এখন আসন সংখ্যার ভাগাভাগিতে নেই, তারা এখন বিজয়ী হতে চান এবং ইসলামকে বিজয়ী করতে চান। যাকে যেখান থেকে মনোনয়ন দিলে জিতবে তাকেই চূড়ান্ত করবে ৮ দল। ইসলামপন্থিদের বাক্স হবে একটি। শুধু ৮ দল নয়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান তারা।
সূত্রমতে, জামায়াতের ইতঃপূর্বে ঘোষিত তালিকায় বড় পরিবর্তন আসবে শরিকদের জন্য। এর পাশাপাশি অন্তত ৪ জন সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) জামায়াতের মনোনয়ন পেতে পারেন। সম্প্রতি সমাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ৩ জন ভিপি এবং ২ জন জিএসসহ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধিকে জামায়াত মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। যাদের সবাই জুলাই আন্দোলনে ছিলেন সম্মুখসারির নেতা। একজন উপদেষ্টাসহ আরও কয়েকজন সম্মুখসারির জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতার জন্য ওইসব আসন ছাড় দিতে পারে জামায়াত। তাদের সঙ্গে জোট করার চিন্তা-ভাবনা থাকলেও যদি জোট না হয় তারপরও কয়েকজনের জন্য আসন ছাড় দিতে পারে জামায়াত।
ইতোমধ্যে বর্তমান সময়কার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইসলামিক বক্তা ও স্কলার মিজানুর রহমান আজহারিকে জামায়াত ঢাকা-৫ (যাত্রাবাড়ী-ডেমরা) আসনে মনোনয়ন দিচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। জামায়াত সূত্র অবশ্য এ তথ্য সরাসরি অস্বীকার করেনি। উপরন্তু যোগ করেন যে, জামায়াত দেশের খ্যাতনামা জনপ্রিয় আলেমদের সংসদে নিয়ে আসতে চায়। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার একটি আসন থেকে আরেক জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা আমির হামজার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও যারা জনপ্রিয় আলেম কিন্তু সরাসরি জামায়াত করেন না তাদেরও মনোনয়ন দিয়ে এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা চলছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর অমুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে জামায়াত ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে-মন্দির পাহারা, পূজার নিরাপত্তা বিধান করাসহ নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে। তাদের ধর্মীয় উপাসনালয় এবং জানমালের হেফাজতের জন্য জামায়াতকে তারা বিশ্বাসী মনে করে। এজন্য অমুসলিম সম্প্রদায় থেকে একাধিক প্রার্থী দিতে পারে দলটি। সেক্ষেত্রে একজন উপজাতি প্রার্থীও হতে পারেন বলে জানা গেছে।
জামায়াতের ইতঃপূর্বে ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় কোনো মহিলা ছিলেন না। জানা গেছে, চূড়ান্ত তালিকায় বেশ কয়েকজন মহিলা প্রার্থী হিসাবে যুক্ত হতে পারেন। এসব মহিলার অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত ও সুপরিচিত।
– যুগান্তর
























