০৯:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫
গৌরনদীতে শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা রেখে কক্সবাজারে দুই শিক্ষক

সরকারি নীতিমালায় শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা একসাথে করার বিধান নেই: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

কালের ধারা
  • আপডেট সময় ১০:৪০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬৩ বার পড়া হয়েছে

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সাংবাদিকতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক সমাজে এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। সম্প্রতি তারা সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে গেলে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হলে ঘটনাটি সবার সামনে আসে।

বিস্তারিত অভিযোগ

সরেজমিনে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মো. শাহিন এবং ফারহান হোসেন নান্নু গৌরনদীর সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শাহিন গোপালগঞ্জের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং নান্নু আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হওয়ায় এই ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। হারিছুরের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে তারা স্থানীয় শিক্ষক ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। প্রায় আড়াই বছর আগে হারিছুরের তদবিরে শাহিন গোপালগঞ্জ থেকে গৌরনদীর নাঠৈ রিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন এবং নান্নু ৮ বছর আগে গরঙ্গল দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক পদ পান।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতার প্রভাব খাটিয়ে তারা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এর ফলে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।

কক্সবাজার ভ্রমণ এবং তদন্ত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহিন ও সহকারী শিক্ষক ফারহান হোসেন নান্নু সাংবাদিকতার আড়ালে সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে যান। এ সময় তারা কক্সবাজারের ‘রিম রিসোর্ট’-এ অবস্থান করেন। ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক শাহিন বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও বাস্তবে তিনি কক্সবাজারে ছিলেন। একইভাবে, নান্নু অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিলেও পরিবারের সঙ্গে সেই ভ্রমণে অংশ নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে নান্নু তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন দেখান।

অন্যান্য বিতর্কিত অভিযোগ

  • নাঠৈ রিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাধিকবার অস্বাভাবিক চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়েও এলাকায় বিতর্ক আছে।
  • অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক শাহিন চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় গৌরনদী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অঘোষিতভাবে সহকারী হল সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ঢুকে নিজের মেয়েকে উত্তরপত্র বলে দেন। তবে কেন্দ্র সচিব মো. ওয়ালি উল্লাহ জানান, শাহিনের মেয়ে পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র অভিযোগ করে, শাহিন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন দ্বিগুণ আদায় করেন। গত দুই বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণেও ৩-৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
  • গৌরনদী উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, শাহিন সভাপতি হওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার চাপ দিয়েছেন এবং এর জন্য রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতার প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তা আর সম্ভব হয়নি।

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ফারহান হোসেন নান্নুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রধান শিক্ষক মো. শাহিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি কোনো অনিয়ম করিনি। সাংবাদিকদের কাজ অনিয়ম দেখা নয়।”

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি জানান, সরকারি নীতিমালায় শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা একসঙ্গে করার নিয়ম নেই। শাহিনের ছুটি না নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণের অভিযোগ তদন্তের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে নান্নুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

গৌরনদীতে শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা রেখে কক্সবাজারে দুই শিক্ষক

সরকারি নীতিমালায় শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা একসাথে করার বিধান নেই: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা

আপডেট সময় ১০:৪০:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সাংবাদিকতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক সমাজে এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। সম্প্রতি তারা সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে গেলে এবং এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হলে ঘটনাটি সবার সামনে আসে।

বিস্তারিত অভিযোগ

সরেজমিনে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মো. শাহিন এবং ফারহান হোসেন নান্নু গৌরনদীর সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শাহিন গোপালগঞ্জের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং নান্নু আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হওয়ায় এই ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। হারিছুরের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে তারা স্থানীয় শিক্ষক ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। প্রায় আড়াই বছর আগে হারিছুরের তদবিরে শাহিন গোপালগঞ্জ থেকে গৌরনদীর নাঠৈ রিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হন এবং নান্নু ৮ বছর আগে গরঙ্গল দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক পদ পান।

অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতার প্রভাব খাটিয়ে তারা প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এর ফলে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে।

কক্সবাজার ভ্রমণ এবং তদন্ত

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহিন ও সহকারী শিক্ষক ফারহান হোসেন নান্নু সাংবাদিকতার আড়ালে সপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে যান। এ সময় তারা কক্সবাজারের ‘রিম রিসোর্ট’-এ অবস্থান করেন। ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক শাহিন বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও বাস্তবে তিনি কক্সবাজারে ছিলেন। একইভাবে, নান্নু অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিলেও পরিবারের সঙ্গে সেই ভ্রমণে অংশ নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে নান্নু তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন দেখান।

অন্যান্য বিতর্কিত অভিযোগ

  • নাঠৈ রিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাধিকবার অস্বাভাবিক চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়েও এলাকায় বিতর্ক আছে।
  • অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক শাহিন চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় গৌরনদী সরকারি কলেজ কেন্দ্রে অঘোষিতভাবে সহকারী হল সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ঢুকে নিজের মেয়েকে উত্তরপত্র বলে দেন। তবে কেন্দ্র সচিব মো. ওয়ালি উল্লাহ জানান, শাহিনের মেয়ে পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র অভিযোগ করে, শাহিন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন দ্বিগুণ আদায় করেন। গত দুই বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণেও ৩-৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
  • গৌরনদী উপজেলা শিক্ষক কর্মচারী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইলিয়াস হোসেন জানান, শাহিন সভাপতি হওয়ার জন্য তাকে একাধিকবার চাপ দিয়েছেন এবং এর জন্য রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতার প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর তা আর সম্ভব হয়নি।

অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক ফারহান হোসেন নান্নুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রধান শিক্ষক মো. শাহিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি কোনো অনিয়ম করিনি। সাংবাদিকদের কাজ অনিয়ম দেখা নয়।”

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি জানান, সরকারি নীতিমালায় শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা একসঙ্গে করার নিয়ম নেই। শাহিনের ছুটি না নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণের অভিযোগ তদন্তের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে নান্নুর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।