০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

পিরোজপুর-২ আসনের বিএনপি এখন নেতৃত্ব সংকটে জর্জরিত।

কালেরধারা
  • আপডেট সময় ০৩:১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

কালের ধারা নিউজ ডেস্কঃ

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস (৭ নভেম্বর) উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকে ঘিরে দলীয় অসন্তোষ এবং স্থানীয় নেতৃত্বে গোষ্ঠীকরণ—সব মিলিয়ে পিরোজপুর-২ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এদিন বিএনপি ঘরানার একাধিক গ্রুপ নিজেদের আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে। মনোনীত প্রার্থী আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর তীব্র অসন্তোষ ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

স্বরূপকাঠী পৌর বিএনপি আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনকে সঙ্গে নিয়ে র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করলেও উপজেলা বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে পৌর বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম ফরিদ বলেন, “উপজেলা নেতৃবৃন্দের এ সভায় উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।” তার এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, উপজেলা ও পৌর বিএনপির মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি প্রবল।অন্যদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল বেরুনী সৈকতও তৃণমূলের ব্যাপক অংশগ্রহণে পৃথক র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন। তিনি সভায় আহ্বান জানান—সবাইকে ধানের শীষের পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তবে তার সমর্থকদের মতে, মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য প্রার্থী তিনিই, এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা অপেক্ষায় থাকবেন।

এছাড়া, সাবেক উপজেলা সভাপতি মো. ফখরুল আলমও নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করেন। তার কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, “আমরা পিরোজপুর-২ আসনে ফখরুল আলমকেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চাই।” এমনকি সম্প্রতি শত শত নারী-পুরুষ ফখরুল আলমের পক্ষে মিছিল ও মানববন্ধনও করেন।

ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বেও পৃথক র‍্যালি ও সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নিজেকে ধানের শীষের উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে দাবি করেন।

সব মিলিয়ে ৭ নভেম্বরের কর্মসূচিগুলো ছিল যেন ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবসের নাম করে প্রত্যেকটি গ্রুপই মূলত নিজেদের নেতা ও মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রচারণায় ব্যস্ত থেকেছে।

নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদের স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় তার অনুসারীরাও রাজপথে নিষ্ক্রিয়। তাদের দাবি, “ত্যাগী জননেতা ওয়াহিদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে স্থানীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরবে না।”

রাজনীতি সচেতন মহলের মতে, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন নিরসন এখন সময়ের দাবি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের জন্য এই বিভাজন বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।সর্বশেষ একটি বিষয় বলতে চাই  পিরোজপুর-২ আসনের বিএনপি এখন নেতৃত্ব সংকটে জর্জরিত। বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত থাকলেও, ঐক্যের অভাবে জনগণের আস্থা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি এখনই বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে দলীয় ঐক্য পুনঃস্থাপন না করা হয়, তবে আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির জয় পাওয়া হবে অত্যন্ত কঠিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

পিরোজপুর-২ আসনের বিএনপি এখন নেতৃত্ব সংকটে জর্জরিত।

আপডেট সময় ০৩:১০:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

কালের ধারা নিউজ ডেস্কঃ

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস (৭ নভেম্বর) উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই বিভাজন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উপজেলা ও পৌর বিএনপির মধ্যে মতবিরোধ, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকে ঘিরে দলীয় অসন্তোষ এবং স্থানীয় নেতৃত্বে গোষ্ঠীকরণ—সব মিলিয়ে পিরোজপুর-২ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এদিন বিএনপি ঘরানার একাধিক গ্রুপ নিজেদের আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে। মনোনীত প্রার্থী আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর তীব্র অসন্তোষ ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

স্বরূপকাঠী পৌর বিএনপি আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমনকে সঙ্গে নিয়ে র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করলেও উপজেলা বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে পৌর বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম ফরিদ বলেন, “উপজেলা নেতৃবৃন্দের এ সভায় উপস্থিত থাকা উচিত ছিল।” তার এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, উপজেলা ও পৌর বিএনপির মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি প্রবল।অন্যদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল বেরুনী সৈকতও তৃণমূলের ব্যাপক অংশগ্রহণে পৃথক র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন। তিনি সভায় আহ্বান জানান—সবাইকে ধানের শীষের পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তবে তার সমর্থকদের মতে, মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য প্রার্থী তিনিই, এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তারা অপেক্ষায় থাকবেন।

এছাড়া, সাবেক উপজেলা সভাপতি মো. ফখরুল আলমও নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদা কর্মসূচি পালন করেন। তার কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, “আমরা পিরোজপুর-২ আসনে ফখরুল আলমকেই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে চাই।” এমনকি সম্প্রতি শত শত নারী-পুরুষ ফখরুল আলমের পক্ষে মিছিল ও মানববন্ধনও করেন।

ভাণ্ডারিয়া উপজেলা বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বেও পৃথক র‍্যালি ও সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিনি হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নিজেকে ধানের শীষের উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে দাবি করেন।

সব মিলিয়ে ৭ নভেম্বরের কর্মসূচিগুলো ছিল যেন ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবসের নাম করে প্রত্যেকটি গ্রুপই মূলত নিজেদের নেতা ও মনোনয়ন প্রত্যাশীর প্রচারণায় ব্যস্ত থেকেছে।

নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদের স্থগিতাদেশ বহাল থাকায় তার অনুসারীরাও রাজপথে নিষ্ক্রিয়। তাদের দাবি, “ত্যাগী জননেতা ওয়াহিদের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে স্থানীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরবে না।”

রাজনীতি সচেতন মহলের মতে, পিরোজপুর-২ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিভাজন নিরসন এখন সময়ের দাবি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের জন্য এই বিভাজন বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।সর্বশেষ একটি বিষয় বলতে চাই  পিরোজপুর-২ আসনের বিএনপি এখন নেতৃত্ব সংকটে জর্জরিত। বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত থাকলেও, ঐক্যের অভাবে জনগণের আস্থা হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি এখনই বিভাজনের অবসান ঘটিয়ে দলীয় ঐক্য পুনঃস্থাপন না করা হয়, তবে আসন্ন নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির জয় পাওয়া হবে অত্যন্ত কঠিন।